জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদদের প্রাণের বিনিময় ও বাংলার দেশ প্রেমিক সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারেঘোষণা করেন যে, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে।
বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রত্যয়টি শুধু স্বপ্ন নয়, তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী গড়ার বাস্তব দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ২০০৮ সাল থেকে বায়োমেট্রিক জাতীয় পরিচয়পত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য তথ্য নথিভূক্তকরণ ও আইডি কার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হল বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।
ভোটার তালিকার তথ্য থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের প্রথম উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র উপস্থাপন করে। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে নাগরিকরা ২২ ধরণের সরকারী ও বেসরকারী সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
স্মার্ট কার্ড একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট কার্ড (আইসিসি) সংযুক্ত আছে যা চিপ কার্ড নামেও পরিচিত। স্মার্ট কার্ডে এ চিপ কার্ড মেশিনের সাহায্যে রিড করা যাবে। যেখানে নাগরিকদের সব তথ্য সংরক্ষিত আছে। নতুন ভোটার নিবন্ধনের ফরমে ৪৬ টি কলাম বিদ্যমান থাকে তারমধ্যে ৩২ ধরণের তথ্য স্মার্ট কার্ডে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবা জনগণের হাতের মুটোয়পৌঁছে দিচ্ছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইন সেবার মাধ্যমে। নাগরিকরা ঘরে বসেই জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা গ্রহণ করতে পারবে। নতুন ভোটার নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, স্মার্ট কার্ড ডাউনলোড, প্রভৃতি সেবা এখন জনগণের হাতের মুঠোয়। ভোটার আইডি কার্ড অনলাইন কপি পেতে নতুন ভোটারদের জন্য যেআট সংখ্যার নিবন্ধন ফরম পূরণ করে তা ব্যবহার করে ঘরে বসেই কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবাটি নিতে পারবে। রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য পূরণ করে জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা অতিসহজেই নাগরিকরা গ্রহণ করতে পারবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্ট কার্ড হারিয়ে গেলে কিংবা পরিচয়পত্রে থাকা ভূল তথ্য সংশোধন করা যাবে অনলাইনে। প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়াযা সেবা প্রদানকারীকেরেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করে সেবাটি গ্রহণ করা যায়। সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলাদি স্ক্যান করে অনলাইনে জমা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধীত আইডি কার্ড গ্রহণ করতে পারবে। আইডি কার্ড সংশোধনের ফি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করা যায় যা আবেদনকারীকে স্বশরীরে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয়না। পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইন ভিত্তিক বা জনগণ ঘরে বসেই সহজেই সেবা পেয়ে থাকে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে ই-সেবা প্রক্রিয়াটি বর্তমান সময়ে যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এনআইডি সেবা জনগণের দোর-গোড়ায় পৌঁছে দিতে অনলাইন এনআইডি সেবা চালু প্রক্রিয়াটি বর্তমান সময়ে যুগান্তকারী ই-সেবার দৃষ্টান্তস্থাপন করেছে। নাগরিকরা অনলাইনে ভোটার হিসাবে নিবন্ধিতদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংগ্রহ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংগ্রহ, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, হারানো জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন, নতুন ভোটার নিবন্ধন এবং এসএমএস সেবা ২৪/৭ ভিত্তিক ঘরে বসেই গ্রহণ করছে।
মোবাইল এসএমএস-এর মাধ্যমে এনআইডি নম্বর পেতে হলে ১০৫ নম্বরে এসএমএস করলেই এনআইডি নম্বর পাওয়া যাবে। এনআইডি নম্বরপ্রাপ্ত কার্ডধারীরা অনলাইন পোর্টালে এনআইডি তথ্য ও মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে লগইন করতে পারে। লগইনের পর আবেদনকারী ফরমের এন্ট্রিকৃত ডাটা বা তথ্য দেখতে পারে। আবেদনকারী কার্ডের আবেদনের বর্তমান অবস্থা জানতে পারে। আবেদন অনুমোদিত হলে আবেদনকারী এসএমএস পাবেন এবং অনলাইন পোর্টাল হতে পুনরায় এনআইডি কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। যেসব যোগ্য নাগরিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হননি, তারা কমিশনের ওয়েব সাইটে ভোটার হতে নতুন নিবন্ধনেরআবেদন করতে পারবে।
বিভিন্ন ক্যাটাগরীর সংশোধন অনুমোদন ও নতুন ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নাগরিকরা অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে এনআইডি সংশোধন, নতুন কার্ডের আবেদন ও নতুন ভোটারের নিবন্ধনের জন্য নিজস্ব মোবাইল ও কম্পিউটারের মাধ্যমে আবেদন করে সেবা গ্রহণে ব্যপক সাড়া দিচ্ছে। অনেকে উপজেলা নির্বাচন অফিসে এসে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও ভূয়সী প্রসংসা করছে অনলাইন সেবার। ই-সেবা ও ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য সরকারী সেবা প্রদানের প্রচলিত পদ্ধতি বদলে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের দোরগোড়ায় সস্তায়, সহজে, দ্রুত, স্বচ্ছ ও হয়রানিমুক্ত সেবা পৌঁছে দেয়া।
সাধারণ মানুষের সময় ও ভোগান্তি কমানো ও স্বাচ্ছন্দতা বাড়ানো ও জনজীবন সহজ করাই হলো ই-সেবার প্রধান কারণ। ই-সেবা বাস্তবায়নেবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা প্রদান, সহজে এনআইডি সার্ভিস দ্রুত সময়ে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অনলাইন ভিত্তিক এনআইডি সেবায় নজিরবিহীন যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নাগরিকদের ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড প্রদান করে স্মার্ট নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অবদান রাখছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।
লেখক: সাইফুদ্দীন,
উপজেলা নির্বাচন অফিসার, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ ও এম ফিল গবেষক, লোক প্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আজকের স্বদেশ/জে.এম
Leave a Reply