শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
‘ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালের উপজেলা পরিষদের নির্বাচন থেকে। শান্তিগঞ্জ উপজেলায় তখন আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ ছিলো আওয়ামীলীগই। এ নির্বাচনে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের ছেলে সাদাত মান্নান অভি ও সুনামগঞ্জ সদর আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজি আবুল কালাম ছিলেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রহসনের এ নির্বাচন বয়কটে ছিলো জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
তাই নির্বাচনের দিন ঠাকুরভোগ গ্রামের বিএনপি সমর্থকেরা ভোটে যাননি। এতেই বাঁধে বিপত্তি। ভোটে কেনো যাননি এ নিয়ে ভোট বর্জনকারীদের সাথে হয় বাক্বিকতণ্ডা, তর্কাতর্কি, এক পর্যায়ে মারধর। এই সমস্ত তাণ্ডব চালিয়েছিলেন অভি মান্নান সমর্থক উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সুফি মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা আবদাল মিয়া ও সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাদিকুর রহমানসহ তাদের অনুসারীরা। তৎক্ষালীন সময় এ ঘটনায় মামলা হয়, গ্রেফতার করা হয় নির্যাতিতদের। আওয়ামীলীগের হয়ে সর্বোচ্চ দালালি যারা করেছে তারাই আবার পরিবর্তিত বাংলাদেশে ঠাকুরভোগ গ্রামকে উশৃঙ্খল করে তুলেছে। পুরোনো প্রভাব দেখিয়ে গ্রামে সেই আওয়ামী শাসনতন্ত্র চালু রাখার অপচেষ্টা করে যাচ্ছিল তারা। যা মানেননি ঠাকুরভোগ গ্রামবাসী। বৃষ্টি প্রার্থনায় আয়োজন করা শিরনীতে বয়কট করা হয় আওয়ামী দোসরদের। পরে গ্রামবাসীকে ‘বুড়ো আঙ্গুল’ দেখিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয় দফা শিরনীর আয়োজন করে আওয়ামীপন্থিরা। এতে উত্তপ্ত হয় পরিবেশ, ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। এ ঘটনায় মামলা হলেও অজ্ঞাত কারণে এখনো আওয়ামী দোসরদের গ্রেফতরা করছে না পুলিশ। গ্রেফতার করছে আমরা যারা মার খেয়েছি তাদেরকে। এ বিষয়ে আমরা শঙ্কিত!’
ঠাকুরভোগ গ্রামের মারামারির ঘটনার পেছনের খবর বলতে গিয়ে উপরের কথাগুলো বলেন পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নূর মিয়া। বুধবার বিকালে ঠাকুরভোগ গ্রামে সাংবাদিকদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। তাঁর কথায় কথা জুড়ে দেন মৎস্যজীবী শফিক মিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের ক্ষমতা দেখিয়ে সুফি মিয়া, আবদাল মিয়া ও মিজানুর মিয়া গংরা আমাদেরকে খুবই অত্যাচার করেছে। কষ্ট করে মাছ ধরে আনলে বা মাটি কাটতে গেলেও তাদেরকে চাঁদা দিতে হয়েছে। না হলে নানাভাবে অত্যাচার করেছে।
কোনো বিল বা ডুবা তাদের হাত ছাড়া পাওয়া যেতো না। আমরা সব সময় তটস্থ থাকতাম। গত ১৫/১৬ বছর আমরা খুবই কষ্টে কাটিয়েছি। এখন ঠাকুরভোগ গ্রামে যারা আমাদের অত্যাচার করেছে আমরা তাদের বিচার চাই। সাক্ষাৎকার চলাকালে চোখের পানি ফেলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত আইনুল হকের বাবা ষাটোর্ধ্ব গেদা মিয়া। তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় সিলেটে আমার ছেলে ছাত্রদের পক্ষে মিছিলে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। সরকার আমার ছেলেকে অনেক টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতাও করছে। ঠাকুরভোগে মারামারির দিন আইনুল সিলেটে ছিলো। আওয়ামী দোসররা আমার ছেলে আইনুল ও আইনুলের শিশু ছেলেকেও মামলার আসামী করেছে। আমি এই দোসরদের বিচার চাই।
সিলেট জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মদনমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শিহাব খঁান বলেন, আমার গ্রামের শান্ত পরিবেশকে উশৃঙ্খল করে তুলেছে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা। সুফি মিয়া, আবদাল মিয়া, আবুল মিয়া, গুলজার মিয়া, মিজানুর মিয়া ও সাদিকুর রহমানরা এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরা মানুষকে খুব বিরক্ত করেছে। মানুষ তাদেরকে ট্যাক্স দিয়ে চলাফেরা করতে হয়েছে। আমরা আগেও এর প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু যারা প্রতিবাদী ছিলো তাদেরকে মামলার আসামী করা হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের করা মামলা ও গ্রামের মামলায়ও এরা এজহারভুক্ত আসামী। আমরা জোর দাবি করছি, যারা ঠাকুরভোগ গ্রামে অশান্তি সৃষ্টি করছে তাদেরকে যেনো দ্রুত গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার ও বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত সুফি মিয়া ও সাদিকুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তাদের তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। আবদাল মিয়ার মুঠোফোনে দুই দিনে একাধিকবার কল দিলে তিনিও কল রিসিভ করেন নি।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী বলেন, আসামী গ্রেফতার করছি না তা ঠিক নয়। এ পর্যন্ত আমরা এই ঘটনায় উভয় পক্ষের ৯ অভিযুক্তকে গ্রফতার করেছি। আওয়ামীলীগের লোকদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
Leave a Reply