বিশ্ব ভালবাসা দিবস (Valentine Day) একটি রোমান জাহেলী উৎসব। রোমানরা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার পরেও এ দিবস পালনের প্রথা অব্যাহত রাখে। ১৪ ফেব্রুয়ারী ২৭০ খ্রিস্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন নামক একজন পাদ্রির মৃত্যুদণ্ডের সাথে এ উৎসবটি সম্পৃক্ত। বিধর্মীরা এখনও এ দিবসটি পালন করে। ব্যভিচার ও অনাচারের মধ্যে তারা এ দিবসটি কাটিয়ে থাকে।
কোনও মুসলমানের জন্য কাফেরদের কোনও উৎসব পালন করা জায়েয নয়। কেননা উৎসব (ঈদ) ধর্মীয় বিষয়। এ ক্ষেত্রে শরঈ নির্দেশনার এক চুল পরিমাণ বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন— উৎসব (ঈদ) ধর্মীয় অনুশাসন, ইসলামী আদর্শ ও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন— “তোমাদের প্রত্যেককে আমি আলাদা শরীয়ত ও আদর্শ দিয়েছি।”[১] তিনি আরও বলেন— প্রত্যেক উম্মতের জন্য রয়েছে আলাদা শরীয়ত যা তারা পালন করে থাকে যেমন: কিবলা, নামায ও রোযা।
অতএব, তাদের উৎসব পালন ও তাদের অন্যসব আদর্শ গ্রহণ করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ তাদের সকল উৎসবকে গ্রহণ করা কুফরকে গ্রহণ করার নামান্তর। তাদের কিছু কিছু জিনিস গ্রহণ করা কিছু কিছু কুফরকে গ্রহণ করার নামান্তর। বরং উৎসবগুলো প্রত্যেক ধর্মের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং ধর্মীয় আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম। অতএব, এটি গ্রহণ করা মানে কুফরের সবিশেষ অনুশাসন ও সবচেয়ে প্রকাশ্য আলামতের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা। কোন সন্দেহ নেই যে, এ ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণ করা মানে কুফরের অনুকরণ করা।
এর সর্বনিম্ন অবস্থা হলো, গুনাহ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন— “নিশ্চয় প্রত্যেক কওমের উৎসব রয়েছে। এটা হচ্ছে আমাদের ঈদ বা উৎসব।”এটি যুনার (জিম্মিদের বিশেষ পোশাক) বা এ বিজাতিদের বিশেষ কোন আলামত গ্রহণ করার চেয়ে অধিক নিকৃষ্ট। কেননা এ ধরণের আলামত কোনও ধর্মীয় বিষয় নয়; বরং এ পোশাকের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুমীন ও কাফেরের আলাদা পরিচয় ফুটিয়ে তোলা। পক্ষান্তরে তাদের উৎসব ও উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো একান্ত ধর্মীয়; যে ধর্মকে ও ধর্মাবলম্বীকে লানত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা আল্লাহর আযাব ও গজব নাযিলের কারণ হতে পারে।[২]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন— “কোনও মুসলমানের জন্য কাফেরদের উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুর ক্ষেত্রে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। যেমন: খাবার দাবার, পোশাকাদি, গোসল, আগুন জ্বালানো অথবা এ উৎসবের কারণে কোন অভ্যাস বা ইবাদত বর্জন করা ইত্যাদি। এবং কোনও ভোজানুষ্ঠান করা, উপহার দেওয়া, অথবা এ উৎসব বাস্তবায়নে সহায়ক এমন কিছু বেচাবিক্রি করা জায়েয নয়। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবে শিশুদেরকে খেলতে যেতে দেওয়া এবং সাজসজ্জা প্রকাশ করা জায়েয নয়।
মোদ্দাকথা, বিধর্মীদের উৎসবের নিদর্শন এমন কিছুতে অংশ নেয়া মুসলমানদের জন্য জায়েয নয়। বরং তাদের উৎসবের দিন মুসলমানদের নিকট অন্য সাধারণ দিনের মতই। মুসলমানেরা এ দিনটিকে কোনভাবে বিশেষত্ব দিবে না।[৩]
হাফেয যাহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন— খ্রিস্টানদের উৎসব বা ইহুদীদের উৎসব যেটা তাদের সাথে খাস, এমন কোনও উৎসবে কোনও মুসলমান অংশ গ্রহণ করবে না। যেমনিভাবে কোনও মুসলমান তাদের ধর্মীয় অনুশাসনগুলো ও কিবলাকে গ্রহণ করে না।[৪]
শাইখুল ইসলাম যে হাদীসটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, সে হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন— একবার আবু বকর (রা.) আমার ঘরে এলেন। তখন আমার কাছে আনসারদের দু'টি বালিকা ছিল। বুআসের দিন আনসারগণ যে পংক্তিমালা বলেছিল তারা সেগুলো দিয়ে গান গাইছিল। আয়েশা (রা.) বলেন— মেয়ে দু'টি গায়িকা ছিল না। তা দেখে আবু বকর (রা.) বললেন— রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লামের ঘরে শয়তানের বীনা! সেদিন ছিল ঈদের দিন। তাঁর কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম বললেন— হে আবু বকর, প্রত্যেক জাতির উৎসব থাকে আর এটা আমাদের উৎসবের দিন।[৫]
সুনানে আবু দাউদে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন মদিনাবাসী বিশেষ দু'টি দিনে খেলাধুলা করত। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম বললেন— এ দু'দিনের হাকীকত কী? তারা বলল— জাহেলী যুগে আমরা এ দু'দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম বললেন— “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এ দু'টি দিনের চেয়ে উত্তম দু'টি দিন দিয়েছেন। ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।”[৬]
কাজেই উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝাগেল, ঈদ বা উৎসব প্রত্যেক জাতির একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সুতরাং কোনও জাহেলী উৎসব বা মুশরিক ও কাফিরদের উৎসব পালন করা কোনও মুসলমানের জন্য জায়েয নয়।
তথ্যসূত্র:
[১] সূরা মায়িদা আয়াত: ৪৮,
[২] ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ১/২০৭,
[৩] মাজমুউল ফাতাওয়া ২৯/১৯৩,
[৪] তাশাব্বুহুল খাসিস বি আহলিল খামিস ৪/১৯৩,
[৫] সহীহ বুখারী হাদীস: ৯৫২, সহীহ মুসলিম হাদীস: ৮৯২,
[৬] সুনানে আবু দাঊদ হাদীস: ১১৩৪,
— মাওলানা তোফায়েল আহমদ কামরান রানীগঞ্জী।
তারিখ: ১৪|০২|২০২৩ ইংরেজী
সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম সারোয়ার, বার্তা সম্পাদক জুয়েল আহমদ।
ই-মেইল: ajkershodesh@gmail.com
প্রধান কার্যালয়: ব্যাংক প্লাজা, রানীগঞ্জ বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।