পঞ্চগড় প্রতিনিধি::
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় উপজেলায় এক যুবলীগ নেতা ও তার কয়েকজন অনুসারীর নামে চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে।
এই নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছে এক বিদেশীও। দুই জন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ। মামলা করার পর সিমপা পাওয়ার প্লান্ট নামের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ হুমকির মুখে পড়েছে।
আসামীদের হুমকিতে প্রতিষ্ঠানটির কোন কর্মকর্তা কর্মচারিই প্রতিষ্ঠান থেকে ভয়ে বের হতে পারছেনা বলে উল্লেখ করেন। বিদেশী প্রকৌশলীরাও নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আসামীরা হাইওয়ে রাস্তার বিভিন্ন যায়গায় ওৎ পেতে থাকছেন বলে শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কোম্পানীর ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন।
মামলা সূত্রে জানা যায় উপজেলার শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকে ইউপি ট্যাক্সের নাম করে মাঝিপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত প্যারগন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এ্যকুয়া ব্রিডার্সের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত চাঁদা নিয়ে আসছে।
সম্প্রতি প্যারাগন গ্রুপ এখানে সিমপা পাওয়ার প্লান্ট নামে আরেকটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। বর্তমানে সিমপা পাওয়ার প্লান্ট ১০ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে তেঁতুলিয়া উপজেলায় সরবরাহ করছে। যুবলীগ ঐ নেতা এমাসের ১৪ তারিখ রাতে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ডদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। না হলে কেম্পানী বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়।
পরে ওই রাতেই ডাহুক ব্রীজের সামনে প্যারাগন গ্রুপের মুরগী উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠানের মুরগী বহনকারী একটি ট্রাকের জোর করে গতিরোধ করে যুবলীগ ওই নেতা ও তার ১০/১২ জন অনুসারী চাকু দিয়ে হত্যার হুমকিও প্রদর্শন করে সিকিউরিটি গার্ড এবং ড্রাইভারকে ট্রাক থেকে নিচে নামিয়ে চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে তাদেরকে এলোপাথারী মারতে থাকে।
পরে সবার মোবাইলগুলো নিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে ড্রাইভারের প্যান্টের পকেট থেকে ৪২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে এ ঘটনা কাওকে বললে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই অভিযোগে সিমপা পাওয়ার প্লান্টের সিকিউরিটি অফিসার শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয় এই নেতার হুমকিতে কোম্পানীর কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। বিদেশী প্রকৌশলীরা কোম্পানীতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ। তারা হলেন মাঝিপাড়া এলাকার আলী হোসেন ও প্রামানীক পাড়া গ্রামের শাহ আলম।
এদিকে আসামীরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানা হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা কর্মচারিরা।
ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। বিদেশীরা কাজে আসতে চাননা। এরকম চলতে থাকলে পাওয়ার প্লান্টের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর আগে ২০১৬ সালেও এই নেতার বিরুদ্ধে থানায় সাধারন ডায়েরী করে এ্যকুয়া বিল্ডার্স।
এদিকে গত ২৯ আগষ্ট সিমপা পাওয়ার প্লান্টের পরিচালক জার্মানীর নাগরিক স্টিফেন ডাটহেল সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ওই নেতা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করছেন বলে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে চুক্তি করে এখানে প্যারগন গ্রুপ সিমপা পাওয়ার প্লান্ট গড়ে তোলে। এই প্রতিষ্ঠানে স্পেন, জার্মান এবং ভারতের প্রকৌশলীরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ করছেন ।
কিন্তু মাঝিপাড়া এলাকার মৃত: তৈয়ব আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম তাদের কাজে সমস্যা সৃষ্টি করছেন। তিনি মাঝে মাঝেই চাঁদার দাবীতে বিদেশী প্রকৌশলীদের হুমকি দিচ্ছেন। প্রকৌশলীরা এখানে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার প্রধান আসামী যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম। মোবাইল ফোনে তিনি প্রতিবেদককে জানান, রাজনৈতিক গ্রুপিংএর কারণে তিনি স্বড়যন্ত্রের স্বীকার।
তিনি জানান, প্যরাগন গ্রুপের সাথে ২০১৮ সালে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের জন্য মালামাল সরবরাহের চুক্তি হয় আমার সাথে। চুক্তি অনুযায়ী তিনি ৪১ লাখ টাকার ইট, পাথর, বালি সরবরাহ করেছেন। প্রতিসপ্তাহে বিল দেয়ার কথা থাকলেও কোম্পানীর কাছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ৯ মাস ধরে বকেয়া রয়েছে। ওই টাকা চাইতে গেলে তারা আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছেন। যাহা সম্পুর্ন মিথ্যা।
এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জহুরুল ইসলাম জানান চাঁদা বাজির ঘটনাটি সত্য। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পক্রিয়া চলমান আছে।
আজকের স্বদেশ/জুয়েল
সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম সারোয়ার, বার্তা সম্পাদক জুয়েল আহমদ।
ই-মেইল: ajkershodesh@gmail.com
প্রধান কার্যালয়: ব্যাংক প্লাজা, রানীগঞ্জ বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।