পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা দৃষ্টান্ত রাখলেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সেবিকারা। সেবিকারা নিজেদের উদ্যোগেই পরিচয়হীন আগুনে দগ্ধ এক মানষিক প্রতিবন্ধি নারীকে গত একমাস ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে প্রায় সুস্থ্য করে তুলেছেন। সচেতন মহল মনে করছেন এটি একটি অন্যরকম দৃষ্টান্ত।
গোত্র হীন মানষিক প্রতিবিন্ধি এই নারী তেঁতুলিয়া বাজারের ফুটপাতে থাকতো। সে দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলে। এলাকাবাসীরা অনুমান করছেন সে পাশ্ববর্তি দেশ ভারত থেকে কোন না কোন ভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তেঁতুলিয়া বাজারের ফুটপাতে আশ্রয় নেয়। গত এক বছর ধরে বাজারের বিভিন্ন দোকানের বারান্দা,ফুটপাত এবং রাস্তায় ঘুমাতো সে।
প্রচন্ড শীতে গত ১৬ জানুয়ারী রাতে বাজারের ফুটপাতে আগুন পোহাতে গিয়ে তার পুরো শরীর পুড়ে যায়। ঐ দগ্ধ শরীর নিয়েই সে বাজারে ঘুরে বেড়াতে থাকে। হাসপাতালের ইনডোর ইনচার্জ মেহেরুন আক্তার জানান,ভোর বেলা স্থানীয় কয়েকজন যুবক ঐ নারীকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের সামনে রেখে যায়। ডিউটিরত সেবিকারা তাকে তাৎক্ষনিক ভর্তি করে সেবা দেয়া শুরু করে।
আগুনে তার সমস্ত শরীরের চামড়া পুড়ে গেছে। পরবর্তিতে সেবিকারা নিজেদের উদ্যোগে তার সেবা শুরু করে। মেহেরুন আক্তার জানান ওই নারী নিজের হাতে খেতে পারেনা। আমরা পালাক্রমে তাকে খাবার খাওয়াচ্ছি। টয়লেট ও অন্যান্য সেবা দিচ্ছি। আমরা ২৪ জন সেবিকা নিজেদের উদ্যোগেই নিজেদের অর্থ দিয়ে তাঁকে ডিম, দুধ, ফলমূল ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিচ্ছি।
গত একমাসের চিকিৎসা ও সেবায় সে অনেকটা সুস্থ্য হয়ে উঠেছে। স্থানীয় একটি প্রার্থমীক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মতিউর রহমান জানান,সেবিকাদের সেবা না পেলে ওই নারী সুস্থ্য হতোনা।
এদিকে এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে স্থানীয়রা জানান সেবায় ভালো হলেও জনবলের অভাবে প্রায় দুই লাখ মানুষের জন্য একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কম্পেøক্সটির বেহাল অবস্থা দাঁড়িয়েছে। নেই পর্যাপ্ত পরিমান চিকিৎসক,সেবাদানের জন্য উন্নত মানের যন্ত্রপাতি থাকলেও লোকবলের অভাবে অযতেœ অবহেলায় সেগুলো নষ্ট হতে বসেছে। ফলে স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়েছে এই হাসপাতালে।
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার একমাত্র স্বাস্থ্য কম্পেø´টিতে প্রতিদিন ৩’শ থেকে ৪’শ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। বিশেষ করে এই এলাকার প্রায় লক্ষাধিক পাথর শ্রমিক ও চা শ্রমিকের স্বাস্থ্য সেবা নির্ভর করে এই স্বাস্থ্য কম্পেক্লেসেই। কিন্তু হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের পদের সংখ্যা ২৮টি থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। এর মধ্যে গড়ে একজন থাকেন ছুটিতে। বাকি চারজনের মধ্যে যে কোন একজনকে প্রতিদিনই কোন না কোন সভা সেমিনারে উপস্থিত থাকে। ফলে তিন জন চিকিৎসককেই চালিয়ে নিতে হয় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতাল।
১৫ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র চারজন । দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র এক্স্ররে মেশিনটি বিকল পড়ে রয়েছে। আটট্রাসোনোগ্রাফী মেশিন থাকলেও চালানোর মতো লোক না থাকায় ধুলোবালিতে ভরপৃর। স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুল বাসেত জানান, এই এলাকার শ্রমিকদের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালটি। কিন্তু জনবলের অভাবে কোন সেবা পাচ্ছেনা তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল কাশেম জানান হাসপাতালে জনবলের অভাবে সেবা দিতে আমরা হিমসিম খাচ্ছি। এটি একটি প্রান্তিক এবং সীমান্ত উপজেলা হওয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৩/৪ শ’ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু আমরা নিরুপায়। কতৃপক্ষের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলেও কোন লাভ হয়নি ।
আজকের স্বদেশ/জুয়েল
Leave a Reply