বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত দশম এশীয়-ইউরোপ পার্লামেন্টারি পার্টনারশিপ (আসেপ) সম্মেলন শুক্রবার শেষ হয়েছে। সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে ভাষণের পাশাপাশি বেলজিয়াম হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস প্রেসিডেন্ট মি. শিকফ্রেড ব্রেক-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। এ সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন শিকফ্রেড ব্রেক।
বেলজিয়াম পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ও মানবিক সকল সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভূতপূর্ব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দারিদ্র ও বৈষম্য মুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হবে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রশংসা করে বেলজিয়ামের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস প্রেসিডেন্ট বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুবসমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ তবে এক্ষেত্রে বেলজিয়ামে প্রবীণ জনগোষ্ঠী অধিক হওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা চাপ সৃষ্টি করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের যুব সমাজ সম্ভাবনায়।
তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে বেলজিয়াম ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। এ ইস্যুতে বেলজিয়াম বাংলাদেশের পাশে আছে ও থাকবে।
এর আগে স্পিকার ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টারি ডেলিগেশন ফর রিলেশনস উইথ কান্ট্রিস অফ সাউথ এশিয়ার চেয়ার মিজ জেন ল্যাম্বার্ট-এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় জেন ল্যাম্বার্ট বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেন। জবাবে স্পিকার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশিদারিত্বমূলক ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করতে আসেপকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
আসেপ সম্মেলনে সমাপনীতে স্পিকারঃ ব্রাসেলসে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত দশম আসেপ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে কো-চেয়ার হিসেবে বক্তৃতা করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সেখানে তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ঝুঁকি নিরসনে আসেপ সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সম্মেলনে এশিয়া ও ইউরোপের পার্লামেন্ট সদস্যগণ সংসদীয় কূটনীতি চর্চার মাধ্যমে জলাবায়ু পরিার্তনের ঝুঁকি নিরসনে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পেয়েছে। জনগণের ইতিবাচক পরিবর্তন ও জীবন রক্ষার জন্য সংসদ সদস্যগণকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে সোচ্চার হতে হবে।
সম্মেলনে স্পিকার বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিকে উন্নত ও স্হিতিশীল রাখার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলোকে বিবেচনায় রেখে নীতি ও কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য-শস্য, প্রাণি ও মৎস্য সম্পদ খাতগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যা, সাইক্লোন ও অতিরিক্ত লবণাক্ততা ভূমিকে অনুর্বর করছে। যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধা সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং নিজস্ব অর্থায়ন সমন্বয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে এশিয়ান পার্লামেন্টারি এসেম্বলি’র চেয়ারম্যান মি. টরনারিটিস নিকোস, রাশিয়ান ফেডারেশেনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স’র ডেপুটি চেয়ারম্যান মি. আন্দ্রে ক্লিমভ, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজ হেইদি হাওতালা বক্তৃতা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ব্রাসেলসে দশম আসেপ সম্মেলন শুরু হয়। ওই সম্মেলনে স্পিকারের নেতৃত্বে সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ ও ফজিলাতুন নেসা বাপ্পিসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
Leave a Reply