এহসান বিন মুজাহিরঃ
শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল এর পাশাপাশি একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও দায়িত্ব পালন করছি গত দু’বছর ধরে।
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মাদরাসার শিক্ষকদের নিয়ে আজকে শিক্ষক মিটিং ছিল। সভা শুরুর আগে নূরানি প্রথম শ্রেণিতে একটি ক্লাস নিলাম। ক্লাসে তাদের সবার পরিবার সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করলাম। প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারই অসচ্ছল!
আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ে দেখা যায়, কোনো পরিবারে একাধিক সন্তান থাকলে, মা-বাবা অধিকতর দুর্বল, যাকে নিয়ে তারা হতাশ, তাকেই পাঠান দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর সর্বত্র এটাই হচ্ছে সাধারণ চিত্র। শুধুমাত্র একটা প্রতিষ্ঠান নিয়ে জরিপ করলেও এই চিত্রই পাওয়া যাবে। যেমনটি জরিপ করেছি আমি আমার সাইটুলা মাদরাসায়! আমাদের ধর্মীয় নেতৃত্বের বিকলাঙ্গ দশা বোধ হয় এখানেই। অথচ ইসলামের স্বর্ণ যুগে পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণে ভালো সন্তানকেই পাঠানো হতো। আমরা এই আধুনিক যুগে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে করে যাচ্ছি তার উল্টোটা।
আর এসব কারণেই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গ্রেডিং দিনে দিনে উজ্জ্বল হচ্ছে, মনুষ্যত্বের গ্রেডিং দিনে দিনে তার চেয়ে বেশি অনুজ্জ্বল হচ্ছে।
সাইটুলা ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মান সন্তুষজনক। নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ গড়তে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাদরাসায় পড়াতে হবে।
আর্থিক সমস্যার কারণে মাদরাসার পাঠদান কার্যক্রম কয়েক বছর বন্ধ ছিল। আব্বার নির্দেশে গত দু’বছর থেকে মাদরাসাটি পরিচালনা করে আসছি।
মাদরাসার নিজস্ব কোনো ফান্ড নেই। নেই কোনো কালেকশন। এভাবে ব্যক্তিগত সহযোগিতায় এবং আল্লাহর সাহায্য ছাড়া মাদরাসাটি টিকিয়ে রাখা খুব দুরূহ ব্যাপার।
কওমি মাদরাসা মূলত জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। বড় একটি আয়ের উৎস ঈদুল আজহা, জাকাত, ফেতরা। এসব ফান্ড থেকে গরীব-অসহায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচসহ সার্বিক ব্যয় বহন করা হয়। তাই আগামী ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়া বা এর মূল্য আপনার আশপাশের অসচ্ছল প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিয়ে ইহ ও পরকালের কল্যাণ হাসিল করুন। তবে আপনার প্রতিবেশি গরীব, অসহায় নিকটাত্মীয়দেরও দিতে পারবেন। আবার পশুর চামড়া ব্যবহারও করতে পারবেন।
গ্রামের মানুষ খুব অসচ্ছল। প্রবাসী মানুষও নেই অত্রদ অঞ্চলে। তবে ইদানিং তাদের আন্তরিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের প্রতি। সন্তানদেরকে ভর্তিও করাচ্ছেন। এভাবে সবাই যার যার সামর্থ্যের আলোকে এগিয়ে আসলে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
মাদরাসাটি শ্রীমঙ্গল উপজেলার জানাউড়ার সাইটুলা গ্রামে। ব্রাক এবং খৃস্টান মিশনারী পরিচালিত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মোকাবিলায় দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে ১৯৮৯ সাল থেকে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আধাঁরের মাঝে আলো ছড়াচ্ছে।
আজকের স্বদেশ/তুহিন
Leave a Reply