কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি ::
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট থেকে রাতের আধারে কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করে খাচ্ছে লুটেরাজরা। ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন বারকি নৌকা যোগে পাথর লুট করে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিজিবি কালাসাদক ও পাথর কোয়ারী বিশেষ ক্যাম্প এবং স্থানীয় প্রশাসনকে হাতে রেখে সরকারের কোটি কোটি টাকা মেরে খাচ্ছে একটি মহল।
রাতের আধারে প্রতি নৌকা থেকে ৪ হাজার টাকা করে বিজিবি ও পুলিশের নামে আদায় করা হচ্ছে। এভাবে শত শত নৌকায় প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকার পাথর লুটে নিচ্ছে তারা। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। অপরদিকে বিরাট ক্ষতিসাধন হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের।
পাথর খেকো সিন্ডিকেটের আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। পাহাড় বা টিলা কাটা সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও তার সাথে তাল মিলিয়ে সেখানে রাতে আধারে চলছে পাথর চুরির মহোৎসব।
ফলে সেখানকার স্বাভাবিক পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পাথর খেকোরা ইতিমধ্যেই শতকরা ৬০ভাগ পাথর লুট করে নিয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার পাথর উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
জানা যায়, পাথর খেকোদের সেল্টারদাতা হিসেবে পরিচিত কালাসাদক বিজিবি ক্যাম্পের সাবেক কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার আইয়ূব খান। তার দেখানো পথে অর্থাৎ উত্তরসূরী হিসেবে পাথর লুটপাটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কালাসাদক বিজিবি ক্যাম্পের বর্তমান কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার মনোহর আলী, বিজিবি গোয়েন্দা শাখার হাবিলদার নাসির, পাথর কোয়ারীর বিশেষ ক্যাম্পের হাবিলদার নওশের আলী মোলাহ ও মুখলেছুর রহমান।
পাথর লুট কাজে তারা পাথর খেকোদের সহযোগিতা করে আসছেন। পাথর খেকোদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রতি রাতে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে আয় করে পকেট ভারী করছেন তারা। তাদের নেতৃত্বে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট থেকে পাথর লুটপাট করা হয়। তাদের লালিত বাহিনী দিয়ে রাতে টাকা আদায় করা হয়। এরপর পাথরখেকোরা নৌকা লোড করে ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর নামক স্থানে বিক্রি করে থাকে।
এলাকার জনসাধারণ বিজিবি সদস্যদের এসব অবৈধ কর্মকান্ডের বিষয় জানলেও মুখ খুলে কথা বলার সাহস কেউ পাননা। যেই পাথর লুটের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে, তাকে মামলার হামলার ভয় দেখিয়ে দূরে সরানো হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদেরও টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে থাকে হাবিলদার নওশের আলী মোল্লা। জানা যায়, স্থানীয় পাথর খেকোদের এই অবৈধ অর্থের ‘ধান্ধা’ টিকিয়ে রাখতে তাদের রক্ষাকবজ হয়ে কাজ করছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
অভিযোগ রয়েছে যে, পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে নৌকা প্রতি এক হাজার টাকা করে আদায় করে থাকে কিছু কতিপয় ব্যক্তি। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই লুট করা হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালাসাদক ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার মনোহর আলী জানান, অতীতে পাথর লুটপাট হলেও বর্তমানে তা হচ্ছে না। তিনি পাথর লুটের সকল অভিযোগ এড়িয়ে যান।
পাথর কোয়ারী বিশেষ ক্যাম্পের হাবিলদার নওশের আলী মোলাও পাথর লুটের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর নেতৃতেই পাথর লুট করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন অভিমত নেই। আমি পাথর লুটপাটের সংশ্লিষ্ট কেউ নই।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল হাই বলেন, পাথর চুরি বা লুটপাটের ঘটনা যখনই শুনতে পাই তখনই অভিযান চালিয়ে থাকি।
ইতোপূর্বে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাথর চোররা পাথর বোঝাইকৃত নৌকা নিয়ে দিগবিদিক ছুটতে গিয়ে নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, পুলিশের সংশ্লিষ্ট কেউ এমন কাজ করার প্রশ্নই ওঠেনা।