আজকের স্বদেশ ডেস্ক::
গ্রাম্য সালিশে এক লাখ টাকা জরিমানা আর গর্ভপাত ঘটানোর সিদ্ধান্তে বিচার করা হয়েছে ধর্ষণের। গত রোববার রাত ও সোমবার দু’দফায় ময়মনসিংহের নান্দাইলে এ বিচার করেন স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গ্রাম্য মাতব্বররা।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে জরিমানার ৪৫ হাজার টাকা ভুক্তভোগী পরিবারকে দিয়ে বাকি ৫৫ হাজার টাকা সালিশকারীরাই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের হালিউড়া গ্রামের এক কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে একই গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো. জুনায়েদ আহম্মেদ (১৮)। এর জেরে প্রায়ই ওই কিশোরীর বাড়িতে আসা-যাওয়া করত জুনায়েদ।
গত রোববার রাত ১২টার দিকে জুনায়েদ মেয়েটির ঘরে অবস্থানকালে মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে ‘আজই বিয়ে করতে হবে’ বলে প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে জুনায়েদ রাজি না হয়ে কেটে পড়ার চেষ্টা করলে পরিবারের লোকজন তাকে ঘরের ভেতর বেঁধে রেখে এলাকার লোকজনকে খবর দেয়। রাতে এ নিয়ে এক সালিশের আয়োজনও করা হয়।
সালিশে মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত প্রায় চার মাস ধরে জুনায়েদ তাকে ধর্ষণ করছে। এ অবস্থায় সে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। মেয়ের জবানবন্দি অনুসারে সালিশে বিয়ের সিদ্ধান্ত হলে ছেলেপক্ষ বেঁকে বসে।
পরদিন সকালে ফের এলাকায় সালিশের আয়োজন করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আফির উদ্দিন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুছ ছাত্তার, সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন, মিলন মিয়া ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাসিম উদ্দিনসহ ১০-১২ জন।
উপস্থিত অনেকেই জানান, সালিশে সিদ্ধান্ত হয় মেয়েকে তার পরিবারের জিম্মায় রেখে গর্ভপাত ঘটানো এবং ছেলেপক্ষকে মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তা করে এক লাখ টাকা নগদ দিতে হবে।
পরে সোমবার দুপুরের পর ছেলেপক্ষের লোকজন এক লাখ টাকা পরিশোধ করলে অভিযুক্ত জুনায়েদকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া মেয়েটিকে পাশের গফরগাঁও উপজেলার হাসপাতালের কাছে একটি প্যাথলজি সেন্টারে নিয়ে গর্ভপাত করানো হয় বলে জানা গেছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সালিসের এক লাখ টাকার মধ্যে ৪৫ হাজার টাকা মেয়ের বাবাকে দিলেও ৫৫ হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে সালিশে নেতৃত্বদানকারী ইউপি সদস্য আফির উদ্দিন জানান, তিনি সালিশের আয়োজন করেননি। দুই পক্ষের অনুরোধে কয়েকজন মিলে সমাঝোতা করে দিয়েছেন।
আরেক সালিশকারী মেম্বার মিলন বলেন, ‘আমি রাতের সালিশে ছিলাম। সেখানে আমি বিয়ের কথা বললে ছেলেপক্ষ রাজি না হওয়ায় চলে এসেছিলাম। পরের অবস্থা আমার জানা নেই।’
অভিযুক্ত যুবক জুনায়েদের বাবা মো. আবুল কালাম জানান, তার ছেলেকে রাতভর বেঁধে রেখে মারধর করে মেয়ে পক্ষের লোকজন। পরে কিভাবে কী করেছে তা তিনি জানেন না। তবে টাকার বিনিময়ে ছাড়া হয়েছে, তা জানতে পেরেছেন বলে জানান।
আজকের স্বদেশ/জুয়েল
Leave a Reply