আজকের স্বদেশ ডেস্ক::
কখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করে। কখনও পাহাড় থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে। কখনও আবার মাঠে গরু চড়িয়ে পড়তে হয়েছে তাকে। কত রাত যে তার কেটেছে না খেয়ে সেই হিসাব আমার জানা নেই। শত অভাব অনটনের মাঝেও তার লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। নিজেদের অভাব আর অপূর্ণতার কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন নিবারণের বড় ভাই নির্বাচন।
অদম্য মেধাবী নিবারণ বুনার্জি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের মদন মোহনপুর চা বাগানের চা শ্রমিকের সন্তান। সে বাবুল বুনার্জির ৩ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। মা-বাবা দুজনই জটিল রোগে অসুস্থ। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে গোটা পরিবার পড়ে অথৈ সাগরে। বাবার অসুস্থতার পর বদলি হিসেবে চা বাগানে কাজ পান বড় ভাই নির্বাচন। একমাত্র রোজগারি বড় ভাই নির্বাচন বুনার্জির প্রতিদিনের আয় ৮৫ টাকা। চা বাগানে কাজ করে বড় ভাই নির্বাচন প্রতিদিন যে ৮৫ টাকা আয় করেন তা দিয়েই চলে ৫ জনের পরিবার।
এতে করে নিবারণ পায়নি পুষ্টিকর খাবার ও প্রয়োজনীয় পোশাক। প্রাইভেটও পড়তে পারেনি। এতো প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও এবারের এসএসসিতে মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। এতে সে খুশি হলেও চিন্তিত বেশি।
কিন্তু ভবিষ্যতের পড়ালেখা কীভাবে চলবে এ চিন্তা মাথায় এলে দু’চোখে শুধু অন্ধকার নেমে আসে নিবারণের। একটিই স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে অসহায় বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানো। টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারবে কীনা তাও জানে না সে।
নিবারণ জানায়, তার স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে। অথচ এ স্বপ্ন পূরণের মাঝে অভাবের সংসারে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা।
বোনের কষ্টের দাম দিয়েছে নিবারণ। লেখাপড়ার পেছনে সব চেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন বড় বোন মেধাবী মালা বুনার্জি। সে জানায়, অভাবের জ্বালা যে কতটা ভয়াবহ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। শুধু টাকার অভাবে ভালো কিছু কিনতে পারেনি। মাত্র একটি স্কুল ড্রেসেই কেটে গেছে ক’বছর। টিউশনি পড়ার সামর্থ্য হয়নি কখনও। উপোস করে স্কুলে যাওয়া আসা ছিল নিত্য ঘটনা। ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করা ছিল খুব কষ্টের। নেই কোনো আবাদি জমি। বাড়িতে অসুস্হ মা-বাবা। একমাত্র বড় ভাই ছাড়া আয় রোজগারের তেমন কেউ নেই। বাগানে শ্রমিকের কাজ করে যা কামাই হতো তাই দিয়েই চলতো সংসার।
আ.স্ব./জিএস.ফ.জু
সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম সারোয়ার, বার্তা সম্পাদক জুয়েল আহমদ।
ই-মেইল: ajkershodesh@gmail.com
প্রধান কার্যালয়: ব্যাংক প্লাজা, রানীগঞ্জ বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।