আজকের স্বদেশ ডেস্ক::
গত বছর বন্যার পানিতে তলীয়ে যাবার পর এবার বৃষ্টির পানিতে ডুবলো পাকনা হাওর। গত বছর ব টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও অতিবৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে পানি জমে নীচু জমিগুলো পানিতে তলীয়ে গেছে। অন্যদিকে সুরমা নদীর পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো নিয়েও কৃষকদের মনে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে।
পাকনা হাওরের বাসিন্দা কৃষক সাজিদুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘গেলবারের ফসল ডুবছে বাঁধ ভাইঙ্গা, এর আগেরবারে নিছে হিলে (শীলাবৃষ্টি) আর মেঘে, গতবার চৈত মাসে এতো ফানি হইছে জীবনে এমন দেহিনাই, চোখের সামনে পাকা ধান ফানির নীছে গেছে। তিন বার হিলে (শীলাবৃষ্টি) মারছে আর অহন দেনা কইরা ফসল করছিলাম মেঘের লাইগ্যা ধান পানির নীছে যাইতাছে। বেপারী নাই (ধান কাটার শ্রমিক) ধান ক্ষেতে এহন মাত্র ধান পাকছে, কাটতেও পারিনাই। যে ধান কাইটা মাড়াই দিছি রোদেও কারণে এই ধানও নষ্ট হইতাছে। দেনা কইরা জমি (কৃষিজমি) করছিলাম, দেনাই দিমু কেমনে আর কি কইরা বউ-বাচ্চা নিয়া সারা বছর চলমু এই চিন্তায় জীবন অছি’। মেঘের ফানি (পানি) আইয়া বাইস্যা মাস (বর্ষা মাস) হইয়া যাইতাছে। ৫০ উর্ধ বয়সের কিষাণী ফুলেছা বানু বলেন, মেঘে আর ফাইন্যে সোনার দেশ রুপা হইয়া গেছে। বৈশাখ মাস, ফাইন্যে মনে হয় বাইস্যা (বর্ষা কাল) অইয়া গেছে। যে জমি রোয়াইছিলাম হেই জমি ফানির নীছে চইলা যাইতোছে। অনেক কৃষকই কোমর পানি উঁড়– পােিত নেমে অধাপাকা ধান কাটতে দেখা গেছে।
হাওরের ফেনারবাঁকের কৃষক, আবুল খায়ের, নবাব মিয়া, ছানা মিয়া, শান্তি পুরের আশরাফুল, হঠামারার আ: রহিম, জানান পাকনা হাওরের অধিকাংশ জমিই বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ফসল কাটার কয়েকটা দিনের জন্য গ্রামে-গ্রামে মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করছেন কৃষকরা।
বোরো উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের বোরোধান এলাকার চাহিদা মিটিযেও লাখ-লাখ মণ ধান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকে। জেলার পাকনা হাওর, চাদরা হাওর, সোনার থাল, ডোবাইল হাওরে জামালগঞ্জের আলীপুর, কামধরপুর, শ্রীমন্তপুর, শুকদেবপুর ও কৃষ্টপুরের আংশিক জমির উঠতি ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। ওই হাওরের ফেনারবাঁক, শান্তিপুর, পশ্চিম ফেনারবাঁক, ভতিয়ারপুর, শীরফপুর, হঠামারা, নাজিমনগর, উদয়পুর, লক্ষীপুর, ইনাত নগর, বিনাজুরা, দৌলতপুর, ছয়হারা, রাজাপুরসহ বেশ কিছু গ্রামের আংশিক ফসল শীলাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় ক্ষয়ক্ষকি হয়েছে। কৃষক বজলুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমার কৃষি কাজ প্রায় ছাড়ার মতোই, রোপনরে সময় কাজের লোকের অভাব. আবার এখন মাঠে পাকা ধান কিন্তু শ্রমিক নাই, সব মিলিয়ে গড় পরতায় পোষেনা। এর জন্য অনেকই ধান কাটতে পারছেনানা।
পাকানা হাওরে জমি রোপন পিছিয়ে যাওয়ার কারণে ধান পাকতে অনেক দেরী হয়েছে। এখন কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বেশির ভাগ জমি পানিতে যুবতেছে। কাট ও মাড়াই ধান রোদে শুকাতে পাছেননা কৃষকরা, এত ধানে চরম ক্ষতি হচ্ছে। সরেজমিন হাওরাঞ্চল ঘুরে দেখাযায় বেশ ক’দিনের ভারি বর্ষনে নদীর পানি বৃদ্ধির কারনে তাহিরপুরের শনির হাওর. জামালগঞ্জের পাকনা হাওর, ধর্মপাশার ধানকুনিয়া ও ধারাম হাওরের কৃষকরা কোমর পানিতে পাকা-আধাপাকা ধান কাটছেন। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কয়েক হাজার হেক্টর উঠতি পাকা ধান। দিন দিন ডুবছে ফসলী মাঠ। ক’দি পূর্বে যেখানে ছিল সোনালী ধানের ঢেউ, এবার এখানে রূপালী ঢেউ খেলা করছে। গৃহস্থরা দলীয় শ্রমিকদের কয়েক ভাগে ভাগ করে ধান কাটাচ্ছেন। প্রতি দিন গড়ে যে পরিমান ধান ফসলী জমি থেকে মাড়াই খলায় আসার কথা, তার চেয়েও অধিক কম পরিমান ধান উঠে আসছে মাড়াইয়ে। এতে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। বহু কৃষক পাকা ধান কাটাতে শ্রমিকের খোঁজে এখনোও দ্বিগবিদ্বিগ ছুঠে বেড়াচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৫৪ টি হাওরে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। গত
বছরের এপ্রিল মাসের অতিবৃষ্টি ও পাহাঢ়ি ঢলে একের পর এক জেলার সব ক’টি হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যায়। এতে জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ টি কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হন। চলতি বছর জেলার বিভিন্ন হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন। অধিকাংশ হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষের পথে। চলতি কয়েক দিনের বৃষ্টিাতে কাটা ও মাড়াইকৃত ধান কিছু নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নীচু জমিতে পানি জমে কিছু পাকা ফসল তলিয়ে যাচ্ছে।
আজকের স্বদেশ/জুয়েল
সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম সারোয়ার, বার্তা সম্পাদক জুয়েল আহমদ।
ই-মেইল: ajkershodesh@gmail.com
প্রধান কার্যালয়: ব্যাংক প্লাজা, রানীগঞ্জ বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।