আজকের স্বদেশ ডেস্ক::
বগুড়ার শেরপুরে ট্রাক চাপায় বাম হাত হারানো স্কুল ছাত্রী সুমি হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সে বার বার মাকে বলছে, আমার বাম হাত কোথায়, ডান হাতই বা এমন কেন? মেয়ের এ অবস্থা দেখে মায়ের চোখের পানি টলমল করছে । তাই সুমির কথায় কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ মা মরিয়ম বেগম। একদিকে মেয়ের এ অবস্থা অন্যদিকে সংসারে অভাব অনটনের কারনে মরিয়মের চারদিকে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে।
দিশেহারা মরিয়ম জানান, অভাব অনটনের সংসার তাদের। সুমির বাবা সংসার চালাতেন ভ্যান গাড়ী চালিয়ে। কিন্তু গত এক মাস আগে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তিনি আর ভ্যান চালাতে পারেন না। মরিয়মের ঝিয়ের কাজই এখন একমাত্র আয়ের উৎস্য। এমন অবস্থায় এরকম একটা বিপদে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা বুঝতে পারছেন না আগামীতে কিভাবে তাদের দিন চলবে।
সুমির মা শোকে পাথর হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। মেয়ের মাথার পাশে সারাক্ষণ বসে বসে দিন রাত পার করছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে বাবার সাথে সুমির দেখা হয়েছিলো হাসপাতালেই। বাবার কাঁন্নায় ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেলো উপস্থিত সকলের হৃদয়। সুমির বাবা দুলাল মিয়া কেঁদে কেঁদে বললেন, আমি ওর কষ্ট দেখে রাতে ঘুমাতে পারিনা। খাবারও পেটে ঢুকছে না।
এমন অবস্থায় অনেকে সুমির পরিবারের সাহায্যে হাত বাড়িয়েছেন। তারা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র, সুমির জন্য গেঞ্জি, প্যান্ট কিনে দিয়ে এসেছেন।
ওর উন্নত চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের টাকা প্রয়োজন। কোন হৃদয়বান ব্যাক্তি ওর উন্নত চিকিৎসার জন্য হাত বাড়াতে পারেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা প্রশাসক নূরে আলম সিদ্দিকী , জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু ।
ডাক্তাররা বলেছেন, সুমির অবস্থা এখন ভালো। তবুও হাত হারানোর ব্যাথায় সে এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। সুমির ছোট চাচি পারুল বেগম জানান, সুমির মা অনেকটা মানসিক প্রতিবন্ধি। মানুষের বাসায় ঝিঁ এর কাজ করে। ওর বাবার বয়স হয়েছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিনি। সুমির মায়ের কাজের উপরেই ওদের দুই বেলা খাওয়া চলে। এমন পরিস্থিতিতে সুমিকে নিয়ে তারা ভিষণভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) এর উপাধ্যক্ষ ডা: রেজাউল আলম জুয়েল জানান, সুমির অবস্থা এখন আগের চেয়ে একটু ভালো। ওর জন্য হাসপাতাল থেকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুর দেড়টায় জেলার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বাজার থেকে মহাসড়ক ধরে পায়ে হেটে বাড়িতে যাচ্ছিলেন মরিয়ম বেগম। মায়ের হাতে হাত রেখেই পাশাপাশি হাটছিলো শিশু সুমি। কিছু দূর গিয়ে মহাসড়ক ক্রস করে অন্য রাস্তায় যেতে হবে তাদের। মা মরিয়ম কন্যাকে কোলে তুলে নেয়। রাস্তার মাঝখানে গিয়ে পড়ে থাকা একটি পাথরের সাথে হোচট লেগে দুজনেই পড়ে যায়। পিছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি ট্রাক রাস্তায় পড়ে যাওয়া সুমির বাম হাতের উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই বাম হাত ছিঁড়ে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সুমি এখন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
আজকের স্বদেশ/জুয়েল
সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম সারোয়ার, বার্তা সম্পাদক জুয়েল আহমদ।
ই-মেইল: ajkershodesh@gmail.com
প্রধান কার্যালয়: ব্যাংক প্লাজা, রানীগঞ্জ বাজার, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।