জামালগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় উন্মুক্ত সুরমা নদীতে রাজাকার পরিবারের পাঠান বাহীনি কর্তৃক দরিদ্র জেলেদের মৎস্য ঘের দখল করে চাঁদাবাজিসহ তাদের বেধরক মারধর করার প্রতিবাদে উপজেলার মফিজনগর গ্রামের প্রত্যাশা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির জেলে এবং সমর্থক ৫ শতাধিক লোকজন ঘন্টাব্যাপী এক মানববন্ধন কর্মসূচি করেছে।
আজ রবিবার ১২ জানুয়ারি সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই মানববন্ধনের পরে স্থানীয় পাঠান বাহীনির দৌরাত্ম্য বন্ধে মানববন্ধনকারীরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারি দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টায় উপজেলার সাচনাবাজার ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের নিকটে উন্মুক্ত সুরমা নদীতে মফিজনগর গ্রামের প্রত্যাশা সমবায় সমিতির নিবন্ধিত জেলেদের মাছের ঘেরে দখল নিয়ে নুরপুর গ্রামের পাঠান বাহীনির লোকেরা অস্ত্রসস্ত্রসহ হামলা করে ও জেলেদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে।
নতুবা জেলেদের মাছের ঘেরে নামতে দেওয়া হবেনা বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এসময় দরিদ্র জেলেরা কোন প্রকার চাঁদা দিতে রাজী না হওয়ায় পাঠান বাহীনির লোকজন তাদের উপর চড়াও হয় এবং অশ্লীল গালিগালাজ করে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পাঠান বাহীনির লোকজন জেলেদের উপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করে ৪ জনকে গুরুতর আহত করে।
এরপর জেলেদেরকে মেরে পিটিয়ে মাছের ঘের থেকে বের করে দিয়ে নিজেরাই ঘেরের দখল নিয়ে নেয়। বর্তমানে পাঠান বাহীনির ভয়ে জেলেরা তাদের মাছের ঘেরে নামতে না পারায় মৎস্য আহরণও করতে পারছেন না। মৎস্য আহরণই এইসব জেলেদের একমাত্র পেশা।
হামলাকারীরা চাঁদা না পেয়ে জেলেদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার কারণে ভয়ে উন্মুক্ত সুরমা নদীতে নামতে না পারায় তাদের মৎস্য আহরণ ভিত্তিক জীবিকা নির্বাহ বন্ধ রয়েছে।
মৎস্যজীবিদের পক্ষে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সাচনাবাজার ইউনিয়নের প্রাক্তন মেম্বার কবীর আলম, রিয়াজ উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, প্রত্যাশা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, জহিরুল আলম সাদ্দাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, এই পাঠান বাহীনির সবাই কুখ্যাত রাজাকার পরিবারের বিএনপি পন্থী লাঠিয়াল।
এরা সবাই রাজাকার শমরাজ পাঠানের পুত্র, ভাতিজা,ও নাতিপুতি। একটি নিবন্ধিত সমিতির দরিদ্র ও প্রকৃত মৎস্যজীবিদের উপর এরা প্রতি বছরই চাঁদা চেয়ে নির্যাতন চালিয়ে আসছে।
আরও জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি সাচনা বাজার ইউনিয়নের মফিজনগর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে মো. শুক্কুর আলী বাদী হয়ে উপরোক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে জামালগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ৮ জানুয়ারি আসামীরা সুনামগঞ্জ বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিনে এসে ঐদিন রাত ১টা ৩০ মিনিটে মৎস্যজীবীদের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদ বলেন, চলতি নদীতে মৎস্যজীবীদের মাছ মারার অধিকার সরকার করে দিয়েছে। মৎস্যজীবীরা মাছ মারায় যারা তাদেরকে মারধর করেছে নেহাতি অন্যায় কাজ করেছে।
২ জন লোক সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাদের স্মারকলিপি পেয়েছি। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটিতে এ বিষয়ে আলোচনা করে মৎস্যজীবীরা যাতে উন্মুক্ত নদীতে মাছ মারতে পারে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল বলেন, আমি সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভায় আছি। পরে অভিযোগটি দেখে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আজকের স্বদেশ/তালুকদার
Leave a Reply