স্বদেশ ডেস্ক::
মুক্তিযোদ্ধার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে একটি উচ্চতর তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’ নামের একটি সংগঠন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং তাদের পরিবারকে সুরক্ষা দিতে আইনপ্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংগঠনটির ব্যানারে আয়োজিত ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও তাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানান সংগঠনের চেয়ারম্যান, লেখক-গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর আহাদ।
সভায় বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ বীরউত্তম, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) হারুন-অর-রশিদ বীরপ্রতীক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের মহাসচিব আবদুস সামাদ পিন্টু, জাগো নারী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নুরুন্নাহার মেরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হান্নান হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান, ইলিয়াস উদ্দিন, মোজাফফর হোসেন চাঁদ, বাহার উল্লাহ মজুমদার, খন্দকার জহিরুল হক মনি, শিকদার ইদ্রিস আহমেদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেএম সফিউল্লাহ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কেন আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারছি না তা ভাবতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা সমাধানে একটি উপকমিটি গঠন করা যেতে পারে। ওই কমিটি সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দাবি জানাতে পারে। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মানটুকুও দিতে চান না।
এর উদাহরণ দিয়ে কেএম সফিউল্লাহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি জয়দেবপুরে প্রথম অপারেশন শুরু করি। ওই সময় বর্তমান মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ছাত্রনেতা। ওই সময় তার সভাপতি ছিলেন হাবিবুল্লাহ। তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তার বিষয়ে কোথাও কোনো বক্তব্য দেন না মন্ত্রী। সেই সময় শ্রমিক নেতা হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আমাদের দুই ট্রাক অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন, সেসব কেউ বলেন না।
ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। এজন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যেতে হবে। বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করে তার সঙ্গে দেখা করতে হবে। এজন্য তিনি একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।
সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) হারুন-অর-রশিদ বীরপ্রতীক বলেন, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা বারবার করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু রাজাকারের তালিকা করার কোনো উদ্যোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার গত তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে; কিন্তু সংসদে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারেননি ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলাম। তাকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এলাকায় গেলে নতুন নতুন লোকজন এসে করমর্দন করে পরিচয় দেন কেউ জেলা, কেউ উপজেলা, কেউবা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কমান্ডার বা ডেপুটি কমান্ডার।
তিনি বলেন, আমি আসমানের দিকে চেয়ে থাকি। কারণ এদের কাউকে যুদ্ধের ময়দানে দেখিনি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেমধ্যে দূরে কোথাও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নিজেই গিয়ে খোঁজখবর নিই। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের ময়দানে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা ছিল। আর এখন তা বেড়ে কয়েক লাখে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন সংখ্যা বাড়ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকাকে মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারখানা উল্লেখ করে শরীয়তপুরের মুক্তিযোদ্ধা শিকদার ইদ্রিস আহমেদ বলেন, আমি উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য। আমরা যাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করিনি তারা কীভাবে মন্ত্রণালয় ও জামুকার মাধ্যমে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা হন। এটা আমার মাথায় আসে না। যাচাই-বাছাই কমিটি বাদ দিতে হবে।
নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়স উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয় ও জামুকার মাধ্যমে নয়, সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের মাধ্যমে তালিকা করতে হবে। কারণ তারাই সঠিকভাবে বলতে পারবেন কারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল।
খাগড়াছড়ির মুক্তিযোদ্ধা বাহারউল্লাহ মজুমদার বলেন, ১৯৭১ সালের দেড় লাখ মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে কী করে আড়াই লাখ হল। কয়েকশ মুজিবনগর কর্মচারী কী করে কয়েক হাজারে পরিণত হল। তারা ছিল মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী, তারা কী করে মুক্তিযোদ্ধা হন? তারা কী যুদ্ধ করেছেন?
আজকের স্বদেশ/জুয়েল
Leave a Reply